ইতিহাসের পাতা থেকে …
১৯৪৬ সালে ছাঁটাই বিরোধী আন্দোলন ঐক্যের ইতিহাস তৈরি করে। ১৯৪৭ দেশভাগের রক্তাক্ত যন্ত্রনা বুকে চেপে স্বাধীন হল আমাদের দেশ। দু টুকরো হল বাংলাও । আত্মপ্রকাশ করল পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ববঙ্গ। উদ্বাস্তু হল লাখো লাখো মানুষ। স্বাধীনতার স্বপ্নভঙ্গ হল অচিরেই। সারাদেশের সাথে এ রাজ্যেও কংগ্রেসী সরকারের অপশাসনের মুখোমুখি সাধারন মানুষ ও কর্মচারী সমাজ।
৯ মার্চ, ১৯৪৯ কর্মচারী দের শান্তিপূর্ণ সভা- সমাবেশেরঅধিকার কেড়ে নিতে জারী হল কুখ্যাত ৪৭৫ – এফ সার্কুলার । অগ্নিগর্ভ পাঁচেরদশক। ১৯৫৬, ১২ জুন, রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের কাছেস্মারকলিপি পেশ। দাবি ১) মাসিক ২৫ টাকা বিশেষ ভাতা , ২) কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ্য ভাতা , ৩) পূজোর আগে ১০ কিস্তিতে পরিশোধ যোগ্য ১ মাসের অগ্রিম বেতন।
১৪ আগষ্ট মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ । দাবিপত্র নিয়ে আলোচনা। ১৯৫৬ , ৮ সেপ্টেম্বর একই দাবিতে কলকাতায় ওয়েলিংটন স্কোয়ারে বিশাল কর্মচারী জমায়েত। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির আনুশঠানিক আত্মপ্রকাশ। ২৫০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতনের কর্মচারী দের মাসিক ২ টাকা রিলিফ দেবার সরকারী সিদ্ধান্তঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান। সমাবেশের সভাপতি পঞ্চানন মুখোপাধ্যায় সহ ৬ জন নেতাকে সাসপেন্ড করল সরকার ।
১৯৫৮ অরবিন্দ ঘোষ, রাজেন ভট্টাচার্য সহ ২৫জন কর্মী – সংগঠক বরখাস্ত।
১৯৫৯, ৭ আগষ্ট উপনিবেশিক ধাঁচের কুখ্যাত সার্ভিস কন্ডাক্ট রুল জারী। উদ্দ্যেশ্য সরকারী কর্মচারীদের সকল প্রকারআন্দোলন- প্রতিবাদের অধিকার হরণ।
১৯৫৯ ,২২ আগষ্ট তৎকালীন মনুমেন্ট (বর্তমানে শহীদ মিনার) বিশাল সমাবেশ ও মুখ্যমন্ত্রীর নিকট গণডেপুটেশনের কর্মসূচী।
১৯৬০,৬ মে , ওয়েলিংটন স্কোয়ারে গণ-সমাবেশ ও গণ শপথের কর্মসূচী।
১৯৬০, জুন , বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেওয়ার অপরাধে ১৩ জন কর্মচারী সাসপেন্ড, ১জন বরখাস্ত।
১৯৬৪ , ১৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের সাথে প্রথমযৌথ কনভেনশন। ১৮ ডিসেম্বর প্রথম যৌথ মিছিল ও সমাবেশ।
১৯৬৬, ১৩ সেপ্টেম্বর গণছুটির কর্মসূচী।
১৯৬৮, ১৬ মে – রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের প্রথম ধর্মঘট।
১৯৭০, ২৬-২৮ আগষ্ট ৩ দিনের রাজ্যব্যাপী ধর্মঘট পালন করলেন রাজ্য সরকারী কর্মচারীরা।
১৯৭১, মে – আত্মপ্রকাস করল রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির মাসিকমুখপত্র “সংগ্রামী হাতিয়ার”।
১৯৭১ ১৩ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৩১১ (২) (গ)ধারার বলে কোনো কারন নাদেখিয়ে বরখাস্ত করা হল ১৩ জন সংগঠক- নেতৃবৃন্দকে।
১৯৭৪, ৯ এপ্রিল সারা দেশ জুড়ে রাজ্য কর্মচারীদের এক দিনের ঐতিহাসিক ধর্মঘট ।৪৮ লক্ষ রাজ্য সরকারী কর্মচারীর অংশগ্রহন।
১৯৭৪, ২১মে কুখ্যাত সার্কুলার ( ৫০০৯-এফ) জারী করে ধর্মঘটী কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিয়ে নানা ধরনের আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়।
১৯৭৫, ২৫ জুন ঘোষিত অভ্যন্তরীন জরুরী অবস্থা। বন্ধ হয়ে গেলসংগ্রামী হাতিয়ারের প্রকাশনা । মিসায় গ্রেপ্তার করা হল ১৩ জন নেতা সহ ১৬ জন সংগঠককে। পরে আরো ১ জন সহ ১৪ জনকে বরখাস্ত করা হল সংবিধানের ৩১১ (২) (গ)ধারায়।
১৯৭২ সাল হাজার হাজার কর্মচারীর হয়রানী মূলক বদলী, এলাকা থেকেউৎখাত, প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা থেকেবঞ্চনা, আধা ফ্যাসিষ্ট সন্ত্রাসে ষাট জন কর্মী- কর্মচারীর আত্মত্যাগের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে এল রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি।
১৯৭৭, ২১ জুন প্রতিষ্ঠিত হল প্রথম বামফ্রন্ট সরকার। ২৯ জুন, ১৫৮৩-পি.এস তাং ২৯/৬/৭৭ আদেশনামা বলে বরখাস্ত নেতৃত্বের সমস্ত সুযোগ সুবিধা সহ পুনর্বহাল।
১৯৭৭, ২৫ জুন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির স্বীকৃতি প্রত্যার্পন (৫২৬৬-এফ)।
১৯৮০,২৪ মে কলকাতায় কর্মচারীদের বিশাল সমাবেশ। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ঘোষণা করলেন সারভেন্ট কন্ডাক্ট রুলস বাতিল।কর্মচারীদের গোলাম থেকে দেশের সেবকে উত্তরণ।
১৯৮১ পালিত হল সংগঠনের রজত জয়ন্তী। ২০০৬ সুবর্ণ জয়ন্তী পূর্ণ করে শতবর্ষের দিকে যাত্রা শুরু। ইতিহাসের পথ বেয়ে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি নিজেই ইতিহাসের সৃষ্টিকারী। বর্তমানে রাজ্জ্য সরকারি কর্মচারীসমাজ চরম কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। ধর্মঘট ,ট্রেড-ইউনিয়ন অধিকার হরণ করে রাজ্জ্য প্রশাসনে সৃষ্টি করা হয়েছে অভূতপূর্ব সন্ত্রাশ। কর্মচারীদের প্রতি বিপুল আর্থিক বঞ্ছনা,অপমান নামিয়ে আনা হয়েছে। অসন্তোষ আর বিক্ষোভে আন্দোলিত কর্মচারীসমাজ। তাই তৈরি হচ্ছে সংগ্রামের নতুন তরঙ্গ।